সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
হজ নিয়ে যেকোনো সময় আসতে পারে ঘোষণা

হজ নিয়ে যেকোনো সময় আসতে পারে ঘোষণা

স্বদেশ ডেস্ক:

আসন্ন পবিত্র হজে বিদেশীরা যেতে পারবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট করেনি সৌদি আরব। তারপরও আশায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশ। এ বছর হজে যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। সম্প্রতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশীদের এ বছর হজে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছে সৌদি সরকার। তবে আনুষ্ঠানিক ফরমান জারি না হলে কোনো কিছুই বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে চীনে নতুন করে করোনার বিস্তার আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। তবে ভেতরে ভেতরে সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বাংলাদেশ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ থেকে ১২ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যার বাকি আছে আর মাত্র সাড়ে তিন মাস। কিন্তু এখনো হজের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি সৌদি সরকার। বিগত সময়ে আট মাস আগে হজ চুক্তি হলেও এ বছর তা-ও হয়নি। ফলে সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে এখনো আশঙ্কা রয়েছে গত দু’বছরের মতো এবারো হজ থেকে বঞ্চিত হয় কিনা। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন সৌদি সরকারের ঘোষণার দিকে। সৌদি সরকারের সাম্প্রতিক নানা উদ্যোগেও আশার আলো দেখছে মুসলিম বিশ্ব। বর্তমানে করোনার বিস্তার কমে যাওয়ায় গত ৫ মার্চ থেকে এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে সৌদি আরব। ফলে সামাজিক দূরত্ব মানা এবং বাইরে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা উঠে গেছে। এ ছাড়া প্রধান দুই পবিত্র মসজিদ মক্কা ও মদিনার পাশাপাশি দেশটির অন্যান্য মসজিদেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে না।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে না। বিদেশী যাত্রীদের দেশটিতে প্রবেশের পর করোনার পিসিআর পরীার নিয়মও প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে দেশী-বিদেশী নাগরিকদের পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ দিয়েছে সৌদি আরব। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীরা প্রতিনিয়তই মক্কা-মদিনায় যাচ্ছেন।

এ দিকে গত ১৫ মার্চ দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফায়সাল বিন ফারহান আল সাউদ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ড. মোমেন সাংবাদিকদের জানান, হজে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীরা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া যাতে ঢাকায় সম্পন্ন করে যেতে পারেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এবার শতভাগ ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে সম্পন্ন হবে, যাতে কেউ সৌদি বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার না হন।

গত ১৯ থেকে ২৩ মার্চ জেদ্দায় এক মেলা ও সম্মেলনের আয়োজন করে সৌদি সরকার। সেখানে বাংলাদেশের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন অংশ নেন। সফরকালে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক বিন ফাওজান বিন মোহাম্মদ আল রাবিয়াহর সাথে গত ২০ মার্চ ফরিদুল হক খানের সৌজন্য সাাৎ হয়। এ সময় বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রীকে আসন্ন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চান। তখন সৌদি মন্ত্রী জানান, রাজকীয় সৌদি আরব সরকারের প থেকে শিগগিরই এ বিষয়ে ফরমান (ডিক্রি) জারি করা হবে। বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রীকে জানান, কোভিড-১৯ মহামারী উত্তর পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠেয় হজে অংশগ্রহণ করার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের হজযাত্রীরা অধীর আগ্রহে অপো করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি এ সময় বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত কোটার পূর্ণ সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তুতির বিষয়টি জানালে সৌদি হজমন্ত্রী জানান, আসন্ন সৌদি-বাংলাদেশ হজ চুক্তি সম্পাদনকালে হজযাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।

এ বিষয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা আশা করছি ইনশাআল্লাহ এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও মুসল্লিরা হজে যেতে পারবেন। তবে সৌদি সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বতর্মানে চীনে আবার করোনার নতুন ভেরিয়েন্টের বিস্তার ঘটেছে, যা আরো চার-পাঁচটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তারপরও আমরা আশাবাদী। হজচুক্তি হলে তখন কত সংখ্যক যেতে পারবেন তা নির্ধারিত হবে বলেও তিনি জানান।

সম্প্রতি সৌদি আরব সফর করা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন নয়া দিগন্তকে বলেন, সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক মেলা ও সম্মেলনে হজ কিভাবে সম্পন্ন হবে সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি এবার হজব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত করেছে। হাজীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য তারা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। হাজীদের সেবার বিষয়টি তাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাগ করে দিচ্ছে। এককভাবে সেখানে কেউ কর্তৃত্ব করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের হজের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৪ হাজার হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। ফলে ঘোষণা দিলেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। তবে এবার হজে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার বাংলাদেশীদের হজে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা সৌদি সরকার দেয়নি। এজন্য এখনই কোনো কিছু চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এজেন্সিগুলো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। ঘোষণা দিলেই যাতে কার্যক্রম শুরু যায়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877